আধুনিক ডিজাইনে রান্নাঘর সাজানোর সহজ এবং সাশ্রয়ী ১০ টি উপায়

আধুনিক ডিজাইনে রান্নাঘর সাজানোর সহজ এবং সাশ্রয়ী ১০ টি উপায়

সুন্দর ও গোছানো জিনিস কে না পছন্দ করে, সৌন্দর্য বরাবরই মানুষকে নান্দনিকতার আনন্দ দেয়।একজন ব্যক্তির সৌখিনতার মনোভাব প্রকাশ পায় তার সৌন্দর্য এবং রুচিবোধ থেকেই। মূলত সৌখিনতা বলতে আমরা পরিপাটি থাকাকে বোঝাই কিন্তু একজন সৌখিন ব্যক্তি নিজেকেই নয় বরং তার পরিবেশ এবং বাসস্থানকে ও নান্দনিকভাবে সাজাতে পছন্দ করে। বাসস্থান সাজানোর ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ বেডরুম ড্রয়িং, রুম, ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম সাজানোর কথা ভেবে থাকে, কিন্তু তারা ভুলে যায় বাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অর্থাৎ রান্নাঘরের কথা। প্রতিটা মানুষের জন্য বাসস্থানের যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাসস্থানের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো রান্নাঘর। রান্নাঘর কে বাড়ির যতটা অবহেলিত জায়গা মনে করা হয়, বিষয়টি একদমই তা নয় বরং সাজানোর বা ডেকোরেশন এর জন্য সবার আগে সকলের রান্নাঘরের কথায় বিবেচনা করা উচিত। আমাদের বাড়ির গৃহিণীরা দিনের অধিকাংশ সময় রান্নাঘরে কাটিয়ে দেয় এই বিবেচনাবোধ থেকে রান্নাঘর কে তাদের জন্য আরামদায়ক ভাবে সজ্জিত করা উচিত গুরুত্বের সাথে। এছাড়া ও রান্নাঘর যদি গোছানো থাকে তবে সহজে সকল পণ্য হাতের নাগালে পাওয়া যায়। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত বাড়ির রান্নাঘর কে সুপরিকল্পিত ভাবে সাজানো যাতে গৃহিণীরা স্বাচ্ছন্দ ভাবে সেখানে কাজ করতে পারে।

তাইতো আধুনিক ডিজাইনে সহজ এবং সাশ্রয়ী কিছু উপায় উপস্থাপন করছি আমাদের এই আর্টিকেলে, যা আপনার জন্য রান্নাঘর সাজানোর জন্য সহায়ক এবং উপকারি।

আধুনিক যুগের অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে তৎপর হলেও অনেকের ধারণা হয়তো মোটা অংক ব্যয় করে রান্না ঘর সাজাতে হয়, তাই তারা এই বিষয়টি এড়িয়ে চলে। কিন্তু বর্তমানে খুব সাশ্রয়ী বাজেটের মধ্যে আধুনিক ডিজাইনে রান্নাঘর সাজানো সম্ভব এমনকি রান্নাঘর আকর্ষণীয় করে তোলার কিছু সহজ উপায় রয়েছে যা আপনার রান্নাঘরকে নান্দনিক করে তুলবে সহজেই। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক রান্নাঘরকে সাজানোর সাশ্রয়ী কিছু উপায় সমূহঃ


আধুনিক ডিজাইনে রান্নাঘর সাজানোর সহজ এবং সাশ্রয়ী ১০ টি উপায়


রান্না ঘরের নকশা পরিকল্পনা
রান্না ঘরের নকশা মূলত জায়গার ওপর নির্ভর করে। ছোট রান্নাঘরের জন্য সমান্তরাল অথবা সোজা নকশা উত্তম। একটু বড় জায়গা হলে তা নিজের মতো করে সাজানো যায় যেমন এল অথবা ইউ আকারের নকশা করা যায়। তবে রান্নাঘরের বড় জানালা আবশ্যক জায়গা স্বল্পতার থাকলে ছোট জানালার সাথে পরিপূরক হিসেবে এডজাস্ট ফ্যান ব্যবহার করতে পারেন। এতে রান্নাঘরে বাতাস চলাচলের ভালো ব্যবস্থা থাকবে। রান্নাঘরের পানি নিষ্কাশনের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে রান্না করে পানি নিষ্কাশনের সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশি তাই এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।<br><br>

রান্নাঘরের কেবিনেট এর ব্যবস্থা করুন
রান্নাঘরের কেবিনেট এর ব্যবস্থা থাকলে সহজেই জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা যায়। এতে অনেকটা জায়গা ও সাশ্রয় হয়। এবং রান্নাঘরে আলাদা করে আসবাবপত্রের প্রয়োজন হয় না। কেবিনেটে আলাদা ড্রয়ারে ব্যবস্থা করা যায়, এতে করে পণ্য সংরক্ষণ করা সহজ হবে। কাঠ ও লোহার কেবিনেট দীর্ঘদিনের স্থায়ী হয়। আপনার যদি অলরেডি কেবিনেট থেকে থাকে তবে কেবিনেট গুলো নতুন করে রং করার ব্যবস্থা করুন, এটি রান্নাঘরকে নতুন জীবন দিতে সাহায্য করবে। <br><br>


রান্না ঘরের দেয়াল সজ্জিতকরুন
রান্নাঘরে যদি ফাঁকা দেয়াল থাকে তবে সেখানে বিভিন্ন শোপিস প্লেট ব্যবহার করে দেয়ালটি সাজিয়ে তুলতে পারেন। এতে আপনার সৃজনশীলতা প্রকাশ পাবে এবং আপনার রান্নাঘর অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি নান্দনিক হয়ে উঠবে। <br><br>


আলোকসজ্জা
সাধারণত রান্নাঘরে আলোর ব্যবস্থা কম থাকে একটি অথবা বেশি হলে দুটি লাইট ব্যবহার করে থাকে অনেক ক্ষেত্রে এতে পর্যাপ্ত পরিমান আলো পাওয়া যায় না। রান্নাঘর সাজানো পরিকল্পনায় বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। এছাড়াও কেবিনেট এর নিচে অথবা সিলিং এর অংশের লাইটিং করে সাজাতে পারেন,বাজারে বর্তমানে বিভিন্ন ডিজাইনের ঝাড়বাতি বা পেন্ডেন্ট লাইট পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো ও ব্যবহার করতে পারেন। আলোকসজ্জা আপনার রান্নাঘরে আধুনিকতার ছোঁয়া এনে দেবে। <br><br>


রান্না ঘরের সিলিং এর দেয়ালের রং নির্বাচন
রান্নাঘর হওয়া উচিত উজ্জ্বল। তাই সিলিং ও দেয়ালে এমন রং ব্যবহার করা উচিত যা আলোর প্রতিফলন ঘটায়। আপনি চাইলে তিন রঙের প্যালেট ব্যবহার করতে পারেন। ডিজাইনের কালার স্কিমের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। বিশেষজ্ঞরা (বেইজ, বালি, বা হালকা ধূসর) চয়ন করার পরামর্শ দেন। এতে আপনার রান্নাঘর টা অনেক প্রাণবন্ত দেখাবে। <br><br>

রান্না ঘরের মেঝের ডিজাইন
রান্নাঘরের জন্য আদর্শ মেঝে হলো সিরামিকের টাইলস করানো। এতে দাগ লাগলে খুব সহজেই পরিষ্কার করা যায়। এমনকি মেঝেটি দেখতেও খুব চকচকে লাগে।যারা সিরামিকের টাইলস ব্যবহার করতে পারবে না তাদের জন্য বিকল্প হিসেবে বর্তমানে বাজারে বেশ কিছু ডিজাইনের ফ্লোর কভার পাওয়া যাচ্ছে এটিও বেশ চমৎকার কাজে আসে। আপনি যদি মেঝেতে চীনামাটির বাসন পাথরওয়ালা কার্পেট ব্যবহার করেন তবে পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকগুণ কম সময় লাগবে।<br><br>


খোলা তাক রাখুন
রান্নাঘরের খোলা তাক গুলোতে ছোট ছোট জিনিস যেমন চামচের গোছা অথবা রান্না ঘরের কাঠের সামগ্রীগুলো সাজিয়ে রাখতে পারেন। এটি আপনার রান্না ঘরে একটি আভিজাত্যের রূপ এনে দেবে।<br><br>


রান্না ঘরের যাবতীয় কাজের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করুন
রান্না ঘরের যাবতীয় কাজ যেমন সবজি কাটা বা বাছার, ধোয়ার জন্য জন্য যথেষ্ট পরিমান জায়গার প্রয়োজন হয়, এই এ নির্দিষ্ট জায়গাটি রান্না ঘরে থাকা দরকার, রান্না ঘর নির্মাণের সময় এই বিষয়ে আলাদা মনোযোগ দেওয়া জরুরি। <br><br>


রান্নাঘরের আসবাবপত্র নির্বাচন
রান্নাঘরে আসবাবপত্র হওয়া উচিত প্রয়োজনমাফিক এবং যুক্তিসংগত, অর্থাৎ যা না হলেই নয় এ ধরনের আসবাব দিয়ে রান্নাঘর সাজানো উচিত, অতিরিক্ত আসবাবপত্রের কারণে রান্নাঘরকে অগোছালো দেখাতে পারে, এবং অনেক জায়গা ও এতে নষ্ট হয় ফলে চলাচলের অসুবিধা সৃষ্টি হয়। আসবাবপত্র রান্নাঘরে যত কম হবে, রান্নাঘরটি তত খোলামেলা থাকবে। চাইলে আপনার রান্না ঘরে সাদা রংয়ের আসবাবপত্র ব্যবহার করতে পারেন সাদা হল একটি ভিজ্যুয়াল স্পেস এক্সপেন্ডার যা আপনার রান্নাঘরকে আরও উজ্জ্বল এবং আরও শৌখিন করে তুলবে।<br><br>


আলাদা স্টোরেজ তৈরি করুন
জলখাবার বা স্নাক্স রাখার জন্য আলাদা ড্রয়ার তৈরি করতে পারেন। রান্নাঘরের জলখাবার বা স্নাক্স প্রায়শই অগোছালো অবস্থায় থাকে। আবার অনেক সময় খুঁজে পেতে সমস্যা হয়, তাই স্টোরেজের জন্য আলাদা জায়গা থাকলে জিনিসগুলো গোছানো থাকবে এবং সহজেই হাতের নাগালে পাওয়া যাবে।<br><br>


রান্নাঘরের অভ্যন্তরের পরিকল্পনা করার সময়,আইটেমগুলির সজ্জা এবং ব্যবস্থা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়াই যথেষ্ট নয়। এমন অনেকগুলি কারণও থাকবে যা নকশা প্রকল্পকে তার সমস্ত বিবরণ বাস্তবায়িত করতে দেবে না, অথবা এর জন্য পরিকল্পনার চেয়ে অনেক বেশি প্রচেষ্টা,এবং সময় প্রয়োজন হবে। <br><br>


তবে রান্নাঘর ছোট হোক বা বড় সাজিয়ে রাখলে সব কিছুর মধ্যেই সৌন্দর্যের আবির্ভাব ঘটানো সম্ভব। এছাড়াও যথেষ্ট আলো-বাতাস এর সুব্যবস্থা আছে এমন একটি রান্নাঘর দেখতে ও ভীষণ নান্দনিক লাগে। বাড়ির গৃহিণীরা যেন স্বাচ্ছন্দে সেখানে কাজ করতে পারে এমন একটি রান্নাঘর তাদের উপহার দেওয়া যেতেই পারে। তাই দেরি না করে সাশ্রয়ী বাজেটে নতুন করে সাজিয়ে তুলুন আপনার বাড়ির রান্নাঘরটা। নিজের সৌখিনতা ও সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটান সৌন্দর্যের বিকাশের মাধ্যমে।

RELATED ARTICLES